স্বদেশ ডেস্ক:
স্বাধীনতার ৫০ বছর পর প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রী সম্মাননা পেলেন নারী বীর মুক্তিযোদ্ধারা। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সারা দেশের মোট ৬৫৪ জন নারী বীর মুক্তিযোদ্ধাকে এ সম্মাননা দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার সকালে কেন্দ্রীয়ভাবে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে হয় মূল অনুষ্ঠান। একই সময়ে সকল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সংশ্লিষ্ট জেলার নারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের এ সম্মাননা দেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত কণ্ঠযোদ্ধা, নির্যাতিতা, সমরাঙ্গনের যোদ্ধারা এই সম্মাননা পেয়েছেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক বলেন, ‘৫০ বছরে আমরা যে কাজটা করতে পারি নাই মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আজ সেটিই করেছে। মহিলা বীর মুক্তিযোদ্ধারা আজ সম্মাননা পেলেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাংলাদেশ উল্টো পথে চলতে শুরু করেছিল ৷ পাকিস্তানি কায়দায় সাম্প্রদায়িকীকরণ করা হয়েছিল। নারীদের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল।
কিন্তু আমাদের নেত্রী নারীর অধিকার ফিরিয়ে দিতে সবকিছু করেছেন। মহিলাদের মর্যাদা কে দিয়েছেন? প্রধানমন্ত্রীই প্রথম ক্ষমতায় এসে সব জায়গায় মায়ের নাম লেখার বিধান চালু করেছিলেন।’
তালিকাভুক্ত শতভাগ নারী মুক্তিযোদ্ধা সরকারের পক্ষ থেকে ঘর পাবেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘সুন্দর ঘর দেওয়া হবে তাদের। ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে এটা করা হবে। যাদের নাম তালিকায় আছেন তারা প্রত্যেকেই বিনা পয়সায় চিকিৎসা ওষুধ পথ্য সব পাবেন। নারী হোক বা পুরুষ, সব মুক্তিযোদ্ধারাই এটা পাবেন।’
দেশের সর্বক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে উল্লেখ করে আ ক ম মোজাম্মেল বলেন, ‘সচিবালয়, ডিসি, এসপি, আদালত সব জায়গায় নারীদের অংশগ্রহণ রয়েছে। কারও দয়ায় তারা সেখানে গেছেন তা কিন্তু নয়। নিজ যোগ্যতাবলে তারা বিভিন্ন পদে কাজ করছেন। এই যোগ্যতাটা তাদের আগেও ছিল, কিন্তু তাদের সুযোগ দেওয়া হতো না ৷ অনেকেরই মুক্তিযুদ্ধে নারীদের অবদান অনুচ্চারিত বা কম উচ্চারিত হয়। আসলে আমাদের মানসিকতার কারণে সবক্ষেত্রেই নারীদের উপেক্ষিত থাকতে হয় ৷ কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এই ধারাটা ভেঙে দিয়েছেন। নারীদের সর্বক্ষেত্রে সম্মান মর্যাদা দিচ্ছেন তিনি। আমাদের এক বোন সম্মাননা নেওয়ার সময় বলছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেন আবার ক্ষমতায় আসেন। কিন্তু তার ক্ষমতায় থাকার সুযোগ নাই, যদি আমরা তার পাশে না থাকি। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকার কোনো সুযোগ নাই, যদি আপনারা, জনগণ না রাখেন। ষড়যন্ত্র করে, ক্যু করে, ক্ষমতায় আসার নজির দেশে আছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ কখনো তা করেনি ৷ জনগণের ম্যান্ডেট নিয়েই আওয়ামী লীগ সব সময় ক্ষমতায় আসবে।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছরেও দেশব্যাপী মহিলা মুক্তিযোদ্ধাদের কখনো সম্মাননা দেওয়া হয়নি। এবারই প্রথম একই দিনে, একই সঙ্গে, একই সময়ে সারা দেশের মহিলা মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননার আয়োজন করা হয়েছে ৷ এটা ঐতিহাসিক একটা ঘটনা ৷ একাত্তরে যখন পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয় তখন ছাত্রী, চাকরিজীবী সব পর্যায়ের নারীরা অংশ নিয়েছেন। বিধবা হতে পারে জেনেও স্ত্রীরা তাদের স্বামীকে যুদ্ধে পাঠিয়েছেন। পুত্রহারা হতে হবে জেনেও মা তাঁর পুত্রকে যুদ্ধে পাঠিয়েছেন। ধর্ষিতা হতে পারেন জেনেও নারীরা তাদের হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। প্রতিটা ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ছিল।’
ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বলেন, ‘আমাদের মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া অপারেশনে আমার ভাইদের সঙ্গে আমিও অংশ নিয়েছিলাম। সেই সময় আমি আমার ভাইয়ের লাশ কোলে করে বাড়ি নিয়ে এসেছিলাম।’
সম্মাননা প্রাপ্ত সকল নারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মারক, উত্তরীয়, শাড়ি ও স্যুভেনিয়র প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে সম্মাননা পাওয়া নারী মুক্তিযোদ্ধা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব লায়লা হাসান বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সরকার ক্ষমতায় আছে বলে আমরা আজ এ সম্মানটা পেলাম। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে আরও আগেই আমরা এটা পেতাম।